বিপ্লব গোস্বামী | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৭:৪৫ অপরাহ্ণ
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আবির্ভূত বিখ্যাত আধুনিক ভারতীয় বাংলা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী ও স্বদেশপ্রেমী কবি।তিনি ঘৃণা করতেন মেকি দেশপ্রেমকে।তাঁর কবিতার ভাষা আধুনিক কবিদের মতো দুর্বোধ্য না হলেও গভীরতা খুব বেশি।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৪২ সালের ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের ফরিদপুরের চন্দ্রগ্ৰামে জন্ম গ্ৰহণ করেন।তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন একজন ইংরেজে ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক।আর মাতা প্রফুল্লনলিনী চক্রবর্তী ছিলেন একজন পরিপূর্ণ গৃহবধূ।কবির পিতার কর্মস্থল ছিল কলকাতায়।তাই মাত্র দু বছর বয়সে কবিকে তাঁর ঠাকুরদাদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে রেখে কলকাতায় চলে আসেন তাঁর মা বাবা।ঠাকুরদাদার কাছে গ্ৰামবাংলার প্রকৃতিক পরিবেশ আর কাদা-মাটিতে বড় হয়ে উঠেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।খুব আনন্দে কাটছিল তাঁর শৈশব।শৈশবেই পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর প্রতিভার।মাত্র চার বছর বয়েসেই তিনি মুখস্থ করেছিলেন রামায়ণ গান ও কবিগান।
কবির প্রাথমিক শিক্ষা শুরু গ্ৰামের পাঠশালাতেই।তারপর ঠাকুরদার মৃত্যুর পর ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে আসেন তিনি।কলকাতায় এসে প্রথমে বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৪২ সালে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন নীরেন্দ্রনাথ।তারপর ১৯৪৪ সালে সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি. এ পাশ করেন তিনি।
কর্ম জীবনে নীরেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।”দৈনিক প্রত্যহ” পত্রিকায় তাঁর সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।”সত্যযুগ” পত্রিকায় সাংবাদিক রূপে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।তারপর তিনি মাতৃভূমি,ভারত,স্বরাজ,ইউনাইটেড প্রেস অফ ইণ্ডিয়া,প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি যোগ দেন “আনন্দবাজার” পত্রিকায়।সেই পত্রিকায় তিনি সম্পাদকীয় নিবন্ধিকার হিসাবে কাজ করতেন।১৯৭৬ সালে তিনি “শিশু কিশোর” পত্রিকার আনন্দমেলার সম্পাদক হিসাবে যোগদান করেন।
সাহিত্যের প্রতি অনুরাগটা তাঁর সেই ছোটবেলা থেকেই।মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা লেখতে শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সে “শ্রীহর্ষ” পত্রিকায় কবিতা লেখার মধ্য দিয়েই সাহিত্য জগতে তাঁর আত্ম প্রকাশ ঘটে।তাঁর প্রথম কাব্যগ্ৰন্থ “নীল নির্জন”, প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে।এর পর একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর কাব্যগ্ৰন্থ অন্ধকার বারান্দা,নীরক্ত করবী,নক্ষত্র জয়ের জন্য,আজ সকালে ,উলঙ্গ রাজা,ভালোবাসা মন্দবাসা প্রভৃতি বিখ্যাত কাব্যগ্ৰন্থ।এসবের মধ্যে “উলঙ্গ রাজা” হচ্ছে তাঁর সর্ব শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্ৰন্থ।”পৃর্তিপুরুষ” তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস, ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয়।তাঁর লেখা আত্মজীবনী মূলক গ্ৰন্থ “নীরবিন্দু-১” ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা কাব্যনাট্য “প্রথম নায়ক”।এছাড়াও তিনি লেখেছেন অনেক ভ্রমণকাহিনী,রহস্যকাহিনী ও ছোটদের ছড়া কবিতা।
আধুনিক বাংলা সাহিত্য রয়েছে তাঁর অনন্য অবদান।সাহিত্যে তাঁর অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে “বঙ্গবিভূষণ” সম্মানে সম্মানিত করে।ঠিক একই বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. লিট ডিগ্ৰী প্রদান করে । ১৯৭৪ সালে তাঁর “উলঙ্গ রাজা” কাব্যগ্ৰন্থের জন্য তিনি লাভ করেন “সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার”।এছাড়া তিনি ১৯৭০ সালে লাভ করেন “তারাশঙ্কর স্মৃতি পুরস্কার” এবং এছাড়াও ১৯৭৬ সালে “আনন্দ শিরমণি পুরস্কার” লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ২০১০ সালে লাভ করেন।”বিদ্যাসাগর পুরস্কার”।
দীর্ঘ দিন বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ৯৪ বছর বয়সে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।অধুনিক বাংলা সাহিত্যে তাঁর অনন্য অবদান অবিস্মরণীয়।তিনি জীবিত হয়ে আছেন তাঁর সৃষ্টি মধ্য দিয়ে।তাঁর অনন্য সৃষ্টি আজও পাঠকমহলে সমাদৃত।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৪৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
seradesh.com | abu sayed