অনলাইন ডেস্ক | ০১ জুলাই ২০২০ | ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
লেখক: আতোয়ার হোসেন-
কোরনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গেছে।করোনাজনীত ছুটি প্রত্যাহারের পর গত প্রায় একমাস যাবৎ কর্মজীবনের সুবাদে দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে জেলা শহর, উপজেলা ও পৌর শহর এবং গ্রামের নিভৃত পল্লী এলাকায় ভ্রমন করার সুযোগ হয়েছে। এই সব এলাকা ভ্র্রমনের প্রেক্ষিতে মনে হয়েছে, করোনার প্রভাবে সারা দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিভাবে, কতদিনের মধ্যে এই আর্থিক কার্যক্রম ঘুরে দাঁড়াবে বা অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক হবে তার অনিশ্চয়তা সাধারণ মানুষের চোখে-মুখে প্রস্ফুটিত হয়েছে।সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকা না থাকায় ক্রয়ক্ষমতা একেবারে শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। কোন বিলাসী পণ্য ব্যতিত শুধুমাত্র ভোগ্যপণ্যের কিছুটা ক্রয়-বিক্রয়ের গতি স্বাভাবিক রয়েছে।
দেশের অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের প্রায় একলক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হলেও তার সুফল বা ইতিবাচক প্রভাব এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে দৃশ্যমান হয়নি।প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্ ক্ষুদ্র অর্থনীতির খাত যেমন: তৈরী পোশাক বিক্রেতা, কামার, ওয়েল্ডিং দোকান, বেকারী, রেষ্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, বানিজ্যিকভাবে ফুল চাষ ও বিপনন, চা-য়ের দোকান, ফুটপাতের বিভিন্ন রকমের দোকান, ষ্টেশনারী ব্যবসা, টিভি-ফ্রিজ সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা, ফেরি করে বিক্রিত সকল পণ্য সহ অসংখ্য ছোট ছোট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একেবারে স্থবীর হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, পরিবহন ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অটোরিক্সা, সিএনজি, রিক্সা, বাস, ট্রাক সহ সংশ্লিষ্ট পার্টস ও সরঞ্জমাদী বিক্রেতাদের অবস্থাও ভয়াবহ রকমের খারাপ। গ্রামীন অর্থনীতির বর্তমান নাজেহাল অবস্থা সরেজমিনে দেখে যা মনে হয়েছে এখানে টাকার ঘূর্ণণ একবোরে বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে ক্রয়-বিক্রয় এর মত অতিব জরুরী কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।
দেশের অবস্থা স্বাভাবিককরণের জন্য গত মাস থেকে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হলেও কোন সেক্টরই আশানুরুপ ফল লাভ করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ আর্থিক ঘূর্ণণ তথা নগদ টাকার অপ্রতুলতা। বিষয়টি আরো একটু পরিস্কার করলে দেখা যায়, নগদ টাকা না থাকায় কোন দ্রব্য কেনার জন্য গ্রামীন ক্রেতা কোন বাজারে গমন করছে না। ফলে রিক্সা/অটো চালক আয় বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিক বাজারে না যাওয়ার কারণে বাজারের দোকানীদের ব্যবসা চালু হচ্ছে না। এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় এরা বড় ব্যবসায়ীদের নিকট কোন মালামাল ক্রয় করছেনা। বড় ব্যবসায়ীরা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হতেও কোন দ্রব্য-সামগ্রি ক্রয় করছেনা। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ষ্টাফ ছাটাই সহ উৎপাদন কার্যক্রম সংকুচিত করে ফেলছে। এভাবে দেশের পুরো আর্থিক কার্যক্রম স্থবীর হয়ে পড়েছে।
এই অবস্থা হতে উত্তোরণের জন্য গ্রামীন জনপদ সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, এক্ষুনি ব্যাপক ভিত্তিতে নগদ টাকার ফ্লো সৃস্টি করার জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে ঋণ আদায়ে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে ঋণ বিতরণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ (এনজিও-এমএফআই)দেশের উন্নয়নে গত প্রায় চার দশকের অধিককাল সময় ধরে বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে জনমানুষের উপকারে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে গেছে।কিন্তু অতিব দু:খের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, সম্প্রতি সময়ে একশ্রেণির মানুষ এনজিও-এমএফআই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বিষেদাগার ও অপপ্রচারের কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কার্যত অত্যাধিক সীমিত পরিসরে শূরু করায় গ্রামীন জনপদে টাকার ঘূর্ণণ স্থবীর হয়ে গেছে।
এই অবস্থা হতে উত্তোরণের জন্য এনজিও-এমএফআই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ নিম্নবর্ণিত কতিপয় প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে-
[১]এনজিও-এমএফআই এর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার, প্রশাসন সহ সকল স্তরের সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করা।
[২] এনজিও-এমএফআই এর স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ করা
[৩]প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ঋণ প্রণোদনা দ্রুত ছাড় করা।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০১ জুলাই ২০২০
seradesh.com | abu sayed