নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ | ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:০৫ অপরাহ্ণ
দেশের অন্যতম বড় ধান-চাল উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ। দেশের বাজারে চালের একটি বড় অংশের সরবরাহ আসে এই জেলা থেকে। সম্প্রতি বাজারে জেলায় চালের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর পাইকারি বাজারে মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিপ্রতি ৩-৪ টাকা বেড়েছে। আর খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা।
এদিকে, চালের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদফা বন্যায় এ বছর আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। বাজারে ধানের আমদানি কম। ধানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দামও বাড়ছে। চালের দামের লাগাম টেনে ধরতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি করতে হবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদন হয়েছে।
জেলার মহাদেবপুর ও স্বরস্বতীপুর বাজার এবং নওগাঁ পৌর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে প্রতিমণ স্বর্ণা-৫ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৪০ টাকায়, গুটি স্বর্ণা ১ হাজার ৬০ টাকায়, কাটারি ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৭০ টাকায়। গত ১৫দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। স্বর্ণা-৫ নতুন চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকায়, জিরাশাইল ৫৬-৫৮ টাকায়, কাটারিভোগ-সম্পাকাটারি ৫৬-৫৮ টাকায়, আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৪৯ টাকায়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিকেজি চালে ৪-৫ টাকা করে দাম বেড়েছে।
শহরের রিকশাচালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘চালের দাম বাড়ছেই। আমাদের মতো খেটে খাওয়া সামন্য আয়ের মানুষের পক্ষে খাওয়া সম্ভব নয়। বেশি দামে চাল কিনলে সবজি কেনা যায় না। তাই খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য চালের বাজার ঠিক রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়েছে। পরপর কয়েকদফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতির কারণে ধানের দাম বেড়েছে। বন্যায় বিঘাপ্রতি ৪-৫ মণ ধানের ফলন কম হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ২০-২৫ লাখ টন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে এবং চালের ক্ষেত্রে ২০-২২ লাখ টন উৎপাদন ঘাটতি হবে। আমন ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়েছে। এছাড়া কৃষকরা ধান কাটার পরই বাজারে বিক্রি করে দেন। এখন বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। দাম বেশি হওয়ায় চালের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এসব কারণেই চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বাজার স্থিতিশীল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ৫০ হাজার মেট্রিকটন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব চাল হয়ত বিভিন্ন বাহিনীসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে ব্যয় করা হবে। ফলে এই আমদানির প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে খোলা বাজারে পড়বে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি করা হলে চালের বাজারের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
‘আবার অতিরিক্ত আমদানি করা হলে আগামী মৌসুমে কৃষকরাও ভোগান্তিতে পড়বে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল আমদানি করতে না পারলে বাজারে চালের দাম আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’
নওগাঁ চাউলকল মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধানের বাজারের ওপর চালের বাজার নির্ভর করে। মিলাররা বাজার থেকে ধান কিনে চাল উৎপাদন করে। ধান বেশি দামে কিনতে হলে বাজারে দাম বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হবে। যেহেতু সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে করে বাজার স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০
seradesh.com | abu sayed